Saturday, May 21, 2022

Used Car বা পুরাতন গাড়ি কেনার আগে যা কিছু জানা প্রয়োজন

 আমাদের দেশের গাড়ি বেচাকেনার প্রায় ৫০ ভাগই পুরাতন গাড়ির। নানা কারণেই আমরা পুরাতন গাড়ি কিনে থাকি। আমাদের সাধারণ অর্থনৈতিক অবস্থা, নতুন বা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অতিরিক্ত দাম, গাড়ি ব্যবহারের উদ্দেশ্য এবং সর্বপরি বাজেটের কথা বিবেচনা করলে এত অধিক সংখ্যক পুরাতন বা ব্যবহার করা গাড়ির কেনাবেচার কারণটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। 


একটি মার্কেটপ্লেসে পুরাতন গাড়ির এড

আমাদের দেশে পুরাতন বা Used Car ক্রেতাদের একটি বড় অংশই নতুন ক্রেতা। অর্থ্যাৎ এসব ক্রেতারা গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন কিন্তু গাড়ি সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না। অনেককেই প্রতারিত হন আবার পুরাতন বা used car কেনার পরবর্তী ফলাফলগুলো বিবেচনায় না থাকায় কেনার পর অনেকেই বিপদের মধ্যে পড়ে যান। 

পুরাতন গাড়ি নতুন ক্রেতারা বেশি কিনে থাকে, যাদের থাকেনা গাড়ি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বা গাড়ি কেনাবেচা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা। 

চলুন ধারণা নেওয়া যাক- পুরাতন বা used car কেনার আগে বিবেচনা করার মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় সম্পর্কে।

  • আপনার বাজেট
গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে আমরা বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসগুলোতে গাড়ি দেখতে থাকি। কোন মডেলের কত দাম, কোন মডেলের কোন সুবিধা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে থাকি। আমরা যতই দেখি ততই বিমোহিত হই। আমার বাজেট যদি ৮ লাখ থাকে ৮ লাখ বা তার কিছু বেশি দাম হতে পারে এমন গাড়িগুলো দেখতে থাকি। শেষে দেখা যায় গাড়ির দামই পড়ে যায় ৮ লাখ ৩০ বা ৪০ হাজার। 

গাড়ি কেনার আগে আমাদের অবশ্যই মাথার রাখতে হবে, গাড়ি কেনার পর বেশ কিছু খরচ রয়েছে, যা আপনার প্রস্তুতির মধ্যে রাখতে হবে। যেমন, গাড়ি শোরুম থেকেই নেন বা ব্যক্তি পর্যায়ের গাড়িই নেন, নেওয়ার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গাড়িতে কিছু কাজ করতে হয়। এর জন্য আপনাকে প্রস্তুতি রাখতে হবে। এছাড়া, গাড়ি কেনার পর অধিকাংশ সময়ই আমরা মালিকানা পরিবর্তন করিনা। মালিকানার পরিবর্তন করে নেওয়া ভালো। এর জন্যও খরচ আপনার প্রস্তুতি রাখতে হবে। তাই আপনার প্রস্তুতি যদি ৮ লাখের হয়, আপনার উচিত হবে সাড়ে ৭ লাখে গাড়ি কেনা। 

  • আপনার জন্য সঠিক গাড়ি কোনটি জানুনঃ
আপনার বাজেট অনুযায়ী কোন কোন গাড়ি আপনার জন্য যথাযথ তা বোঝার চেষ্টা করুন। বিক্রয় ডট কম বা অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে গাড়ি দেখে আপনি একটি ধারণা পেতে পারেন। কিছু বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে গাড়ি পছন্দের চেষ্টা করুন-
আপনি নিজে ব্যবহার করবেন, নাকি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করবেন?
গড়ি শেপ কেমন হবে? সেডান, হ্যাচব্যক নাকি এসইউভি? 
তেলে চালাবেন নাকি সিএনজি বা এলপিজি? 
গাড়ির কোন কোম্পানি বা কোন মডেলের হবে?
কত পুরানো গাড়ি আপনি নেবেন? বা সর্বশেষ কোন সালের মডেল নিবেন? ইত্যাদি।

নতুন গাড়ি কেনা পুরানো গাড়ি কেনা থেকে সহজ। এছাড়া পুরাতন গাড়ি মেইনটেনেন্স বেশি প্রয়োজন হয়। তাই গাড়ি কেনার সময় এমন মডেল পছন্দ করুন যা রাস্তায় বেশি দেখা যায়। অর্থ্যাৎ আপনার আশেপাশের মেকানিকরা যে গাড়ির ইঞ্জিন বা সিস্টেম সম্পর্কে জানে তেমন গাড়ি পছন্দ করাই ভালো। প্রচলিত মডেলের গাড়ি নিলে পার্টসও স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হয়। না হলে, প্রতিবার কোন পার্টস বদলাতে গেলে আপনার গাড়ি বদলানোর সিদ্ধান্ত নিতে মন চাইতে পারে।

  • গাড়ির রিসেল ভ্যালু
গাড়ি কেনার সময় আমাদের অনেক সময় মনে হয়- দেখে শুনে একটি গাড়ি কিনবো। তারপর সে গাড়িই চালাবো বহুদিন। এমন ভাবনা গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক নয়। আপনি জানেন না, কবে আপনি এই গাড়ি বিক্রি করে দিবেন বা অন্য কোন গাড়ি নেবেন। আমাদের দেশে দেখা যায়, গাড়ি দ্বিতীয় হাত থেকে বারবার হাতবদল হতে থাকে। তাই গাড়ি কেনার সময় আমাদের গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে- যে গাড়ি কিনছেন তা বিক্রি করতে গেলে দাম পাবেন কিনা?

আমাদের দেশে ব্রান্ড ভেদে গাড়ির রিসেল ভ্যালুর দামের পার্থক্য দেখা যায়। প্রচলিত টয়োটার একটি গাড়ি যে দামে রিসেল হয়, কাছাকাছি দামের অন্য একটি হোন্ডা বা নিশান সে দামে বিক্রি হয় না। অধিকাংশ সময় তুলনামূলক কমে বিক্রি হয়। আবার প্রচলিত মডেলের বা তুলনামূলক কম মূল্যের বা বেসিক মডেলের গাড়ির কেনাবেচা বেশি হয়। বিলাসবহুল বা দামী গাড়ির কেনাবেচা কম হয়। তাই রিসেল ভ্যালুও কম থাকে। তাই রিসেল ভ্যালুকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

  • গাড়ির দাম
একটি পুরানো বা ব্যবহৃত গাড়ির দাম কেমন হবে তা নির্ধারণ করা দূরহ। একটি পুরানো মডেলের গাড়ির দাম তুলনামূলক নতুন মডেলের গাড়ির দাম থেকে বেশি হতে পারে। কেনার সময় গাড়িটি কোন অবস্থায় আছে তা গুরুত্বপূর্ণ।
* গাড়ির ইঞ্জিন নতুন না রিকন্ডিশনড।
* গাড়ির সিএনজি কর্ভারসন হয়েছে কিনা।
* গাড়ির রং অরজিনাল নাকি নতুন পেইন্টিং হয়েছে।
গাড়ির ইন্টেরিয়রের অবস্থা কেমন? অনেক সময় গাড়ির বাইরের চাকচিক্য দেখে ইন্টেরিয়রের গুরুত্ব আমরা কম দিই। মনে রাখতে হবে- একটি গাড়িকে কেমন মেইনটেইন করা হয়েছে তার একটি প্রতিফলন থাকে ইন্টেরিয়রে। ইন্টেরিয়রের টপ কাভার কেমন, কোন সিগারেট বার্ণ মার্ক আছি কিনা? ড্যাসবোর্ড কতটা নোংরা? ঘসা দাগের পরিমান কেমন? লাইনিংগুলো কেমন আছে? সিটগুলোর কী অবস্থা এসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত। মনে রাখা উচিত এক্সটেরিয়রে ডেন্টিং করে যা সহজে ঠিক করা যায়, ইন্টেরিয়রে তা ঠিক করা কঠিন।
* গাড়ির ইঞ্জিন অরজিনাল হলে তার মাইলেজ কত? যত কম পাওয়া যায় তত ভালো। টয়োটা তাদের গাড়ির ১.৫ লাখ থেকে ২.৫ লাখ কিলো পর্যন্ত তাদের ইঞ্জিন সক্ষম বলে জানিয়ে থাকে। তবে সবকিছুই নির্ভর করে গাড়ির ইঞ্জিনকে কেমন মেইনটেইন করা হয়েছে তার উপর।
* গাড়ির সেফটি ফিচারগুলো কাজ করে কিনা? এয়ার ব্যাগ আছে কিনা? ড্যাসবোর্ডে প্রতিটি বাটন কাজ করে কিনা?
* গাড়ির চাকাগুলোর কেমন অবস্থা?
* সাসপেশন কেমন?
* ব্রেকিং এর সময় গাড়ির রেসপন্স কেমন? ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনায় করে দামাদামি করতে হবে। গাড়ির অধিকাংশই জিনিসই পরিবর্তন করা যায়। তাই, গাড়িতে যদি কোন ঘাটতি থাকে তা গাড়ির গড় মূল্যকে কমিয়ে দেবে।

  • অভিজ্ঞ মেকানিক বা টেকনিশিয়ানকে দিয়ে গাড়ি দেখান
নিজের পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য টেকনিশিয়ান বা মেকানিককে দিয়ে গাড়ি দেখেন। আশেপাশে কোন টেস্টিং সেন্টার থাকলে সেখান থেকে দেখিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। 

  • টেস্ট ড্রাইভ
গাড়ি যত কাছের মানুষ বা নির্ভরযোগ্য মানুষেরই হোকনা  কোন বা যত আস্থাভাজন লোকই গাড়িকে সার্টিফাই করুক না কেন আপনি নিজে চালাতে পারলে নিজে চালিয়ে দেখুন। প্রয়োজনে সাথে আনা মেকানিক বা টেকনিশিয়ানকে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিন। গাড়ির অডিও সিস্টেম চেক হয়ে গেলে অডিও বন্ধ করে গাড়ি চলার সময় গাড়ির অন্যন্য শব্দের দিকে লক্ষ্য রাখুন।  ইঞ্জিনের শব্দ কেমন? গাড়ির বডি বা চাকা থেকে কোন আপত্তিজনক শব্দ আসছে কিনা? এসি ফুল চালিয়ে ইঞ্চিন রেসপন্স কেমন? হিটিং মিটার কী অবস্থায় থাকে? ব্রেক করলে তার রেসপন্স কেমন? উঁচু নিচুতে সাসপেনশন সাপোর্ট দিতে পারছে কিনা যাচাই করে নিন।

  • গাড়িতে কোন মেজর অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে কী?
বাংলাদেশের রাস্তায় গাড়ি চললে ছোটখাটো খোঁচা, একটু ধাক্কা ইত্যাদি লাগা খুবই স্বাভাবিক। এগুলো খুবসহজে সাড়িয়েও নেওয়া যায়। কিন্তু এমন কোন অ্যাকসিডেন্ট যা গাড়ির মেইনফ্রেমে বা আকৃতির পরিবর্তন ঘটায়, গাড়ির অভ্যন্তরীন ক্ষতি করে তা গাড়ির জন্য ভালো না। এসব গাড়ি কপালে পড়লে তা দুর্ভাগ্যজনক। তবে বড় দুর্ঘটনা বা গাড়ি তে বড় পরিবর্তন লুকানো কঠিন। গাড়ির লাইনিং, ভেতরের অরজিনাল রং বা গাম ইত্যাদি খেয়াল করুন। কোন রকম সন্দেহ হলে সে গাড়ি নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

  • দামাদামি করুন
পুরাতন গাড়ির মডেল অনুযায়ী একটি দাম অভিজ্ঞজনেরা একটি ধারণা করতে পারেন। তবে, কোন গাড়ির দামই নির্ধারিত নয়। গাড়ির অবস্থা দেখে সে অনুযায়ী দামাদামি করুন। অধিকাংশ মার্কেটপ্লেসে ব্যক্তিগত গাড়ির বিক্রিতে যাদের নাম্বার দেওয়া থাকে তাদের অধিকাংশই দালাল। অর্থ্যাৎ গাড়ি কেনাবেচা করে। এদের কাছ থেকে কাগজপত্রে যা আছে তার বাইরে গাড়ির কোন তথ্য পাবেন না। মূল মালিকের কাছ থেকে গাড়ি নেয়ার সুযোগ থাকলে সেটাকে অগ্রাধিকার দিন। 

অনেকে বলে থাকে গাড়ি কখনও পুরাতন হয় না। কারন গাড়ির যে পার্টস পুরাতন বা ক্ষয়ে যা তা পরিবর্তন করে নতুন পার্টস লাগাতে হয়। একটি Well Maintained গাড়ির ক্ষেত্রে তা সত্য। তবে সব কিছুরই একটি বয়স আছে। কম পুরাতন গাড়ির কম পার্টস পরিবর্তনের প্রয়োজন পরে, অধিক পুরাতন গাড়ির একই সময়ে অধিক পার্টস পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। তাই গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বাজেট শেষ কথা থাকলেও আপনার অপশনে যে গাড়িটি কম পুরাতন তাকে অগ্রাধিকার দিন।

গাড়ি কেনার এ বিষয়গুলোর অধিকাংশই আমার নিজের গাড়ি কেনা এবং পরে তা বিক্রির অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লিখলাম। কারো উপকারে এলেই স্বার্থকতা। সকলের জন্য শুভকামনা।